ঢাকা।। আইসিসির মেগা যে কোন আসর আয়োজনে স্বাগতিক মর্যাদা পেতে হলে বিড করতে হয়। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলো ছাড়া বিড করার সাহস অতীতে পায়নি কেউ, এবারেও নয়।
অথচ, কাকতালীয় ভাবে বিড না করেও ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বুকে গড়াচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপ। ২০২০ সালের অক্টোব-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ বিশ্বকাপ ছিল নির্ধারিত।
করোনা ভাইরাম মহামারীর মধ্যে ১৬টি দলকে জড়ো করে অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব নয়, পরিস্থিতির বাস্তবতায় ওলট পালট হয় বিশ্বকাপ। ২০২০ সালের পূর্ব নির্ধারিত আসর এক বছর পিছিয়ে স্বাগতিক মর্যাদা দেয়া হয় ভারতকে।
অস্ট্রেলিয়াকে দেয়া হয় ২০২২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ। এই অদল-বদলেও ভারত স্বাগতিক মর্যাদা পেয়েও লাভ হয়নি ভারতের। টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আহমেদাবাদে ১ লাখ ১০ হাজার দর্শক আসনবিশিষ্ট স্টেডিয়ামকে চাকচিক্য করেও হতাশ হতে হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে এতটাই লেগেছে যে, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় আইপিএল মাঝপথে স্থগিত করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থানান্তর করতে হয়েছে। তাতেই টি-২০ বিশ্বকাপের স্বাগতিক বিসিসিআই তাদের পছন্দের ২টি দেশের ৪টি ভেন্যুতে টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব আইসিসিকে দিলে আইসিসি সে প্রস্তাবকে ‘হ্যাঁ’ বলে।
মরুর বুকে ক্রিকেট কালচার এতোদিন ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেই আশি দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সারজায় ক্রিকেট উত্তাপ দিয়েছে লাগিয়ে।এশিয়া কাপ, অস্ট্রেলেশিয় কাপের মতো মহাদেশীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়েছে। পরবর্তীতে দুবাই, আবুধাবিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ সরগরম।২০১৮ সালে ভারত এশিয়া কাপ ক্রিকেটের স্বাগতিক হয়েও নিজের দেশের পরিবর্তে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২টি স্টেডিয়ামকে নিয়েছে ভেন্যু হিসেবে বেছে।
এবার টি-২০ বিশ্বকাপে বিকল্প ভেন্যু পাওয়ার লবিংয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সঙ্গে ছিল শ্রীলংকাও। ওমানের নাম এই লবিংয়ে পর্যন্ত শোনা যায়নি। অথচ, সেই গত ২৯ জুন আইসিসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওমানকে টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথম পর্বের ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচগুলোর জন্য নির্ধারিত করার ঘোষণা দিয়েছে। টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথম পর্বে ‘এ’ গ্রুপের সব ম্যাচ এবং সুপার-১২, সেমিফাইনাল, ফাইনাল-সব ম্যাচ আয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে নিধারিত করে।
আইসিসির ঘোষণার পর ওমান পেয়েছে মাত্র সাড়ে ৩ মাস সময়। এই অল্প সময়েই আল হাজার পর্বতমালাবেষ্টিত আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের চেহারা বদলে গেছে। মরুর বুকে পাথরের পাহাড়, নেই গাছপালা। অথচ, স্টেডিয়ামের মাঠ পুরো সবুজ ! ৩ হাজার আসনবিশিষ্ট স্টেডিয়ামে বসেছে অস্থায়ী প্রেস বক্স, প্যাভিলিয়, জিম সহ বড় পরিসরের ক্রিকেটের যাবতীয় সব সুযোগ সুবিধা। মরুর বুকে ফাঁকা জায়গায় ফ্লাড লাইটের আলো বহু দূর থেকে জানাচ্ছে স্বাগত। ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ড, জায়ান্ট স্ত্রিন ডাকছে ক্রিকেট প্রেমীদের।
৩ হাজার দর্শকের জন্য টিকিটের বন্দোবস্ত রেখেছে ওমান ক্রিকেট বোর্ড। সাধারণ গ্যালারির জন্য ১০ ওমানী রিয়াল, ভিআইপি গ্যালারির জন্য ৩০ ওমানী রিয়াল। তবে স্টেডিয়ামে নেই কোন টিকিট কাউন্ডার। টিকিট কিনতে হবে অনলাইনে।টিকিট বিক্রিতে সাড়া পড়ার কোন খবরই যে দিতে পারেনি ওমানের পত্র-পত্রিকা।
যে দেশটির ক্রিকেট চর্চা এখনও অপেশাদার। ভারত, পাকিস্তানের অভিবাসী কর্মজীবি শ্রেনীর সঙ্গে স্থানীয় ওমানীজদের নিয়ে চলছে ক্রিকেট। স্বপ্নের পরিধিও খুব বড় নয়। সেই ওমানে ৫.২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একাডেমী মাঠটা তৈরি করে দিয়েছে কিন্তু এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। এই ইতিহাসে এক বাংলাদেশীর নাম খোদাই করে লেখা থাকবে। তিনি সৈয়দ আশরাফুল হক। এসিসির সিওই যখন তিনি, তখন মরুর বুকে ক্রিকেট সম্প্রসারনে ওমানের রাজধানী মাস্কটে একটা পরিকল্পিত ক্রিকেট একাডেমী স্থাপনের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে করণীয় সব কিছুই করেছেন। আল আমিরাতে টার্ফ-১ এবং টার্ফ-২, দুটোরই হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। টার্ফ-১ এ ১৫ ওডিআই, ৩০ টি-২০, টার্ফ-২ তে সেখানে ৫ ওডিআই, ১২ টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।এই দুটি মাঠের একটিতেই বৈশ্বিক ক্রিকেটের মঞ্চ তৈরি। হবে এখানে ৬টি ম্যাচ। বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি এবং স্বাগতিক ওমান খেলবে সুপার-১২ এর লক্ষ্যে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেদিন (৪ অক্টোবর) রেখেছে মাস্কটে পা, তার মাত্র ক’ ঘন্টা আগে ঘূর্ণিঝড় শাহীন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে অনেক কিছু। রাজধানী মাস্কটের রাস্তায় উঠেছে পানি। সেই মাস্কটে এখন ঘূর্ণিঝড় শাহীনের প্রভাব দেখতে পাবে না কেউ। কারণ, টি-২০ বিশ্বকাপ ভেন্যুতে অস্থায়ী গ্যলারি নির্মিত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের পর।
রবিবার স্থানীয় সময় বেলা ২টায় (বাংলাদেশ সময় ৪টা) ওমান-পাপুয়া নিউগিনির ম্যাচ দিয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে। ফ্লাড লাইটের আলো স্বাগত জানাবে বাংলাদেশ দলকে। স্থানীয় সময় সন্ধা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়) টি-২০ বিশ্বকাপ যাত্রায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইসিসি র্যাঙ্কিং সেরা ৮-এ থাকতে না পারায় ২০১৪ সাল থেকে টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে মূল পর্বের টিকিটের জন্য করতে হচ্ছে প্রথম পর্বে লড়াই। অতীতে তিনবারই বাংলাদেশ করেছে কোয়ালিফাই। এবারও গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ফেভারিট।তবে প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ বছর আগে একমাত্র দেখাটা কিন্তু ছিল না সুখকর। নেদারল্যান্ডস এর ডেন হেগ-এ সেই হারের বদলা নেয়ার মঞ্চ তৈরি করুক সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, মোস্তাফিজরা-এটাই সবার প্রত্যাশা।